
সাভার পৌরসভা ও আশুলিয়াকে একত্রিত করে ‘সাভার সিটি করপোরেশন’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যেমন আনন্দের ঢেউ বইছে, তেমনি দেখা যাচ্ছে নতুন উন্নয়নের আশাও। সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়—এটি পুরো সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের জন্য একটি নতুন নগরায়ণ অধ্যায়ের সূচনা। বিশেষ করে কৃষিবিদ সিটির মতো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এটি এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
উন্নত নাগরিক সুবিধার নতুন যুগ
সিটি করপোরেশন ঘোষণার মাধ্যমে সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের নাগরিকরা পাবেন আরও উন্নত সেবা ও আধুনিক অবকাঠামো। উন্নত সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আলোকায়ন, পার্ক, খেলার মাঠ, ওয়াসা-মানের পানি সরবরাহ ও দ্রুত নাগরিক সেবার মাধ্যমে এখানকার জীবনযাত্রার মান অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। কৃষিবিদ সিটি, যা ইতিমধ্যেই একটি পরিকল্পিত, সবুজ ও নিরাপদ আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত, এই উন্নয়নের ধারায় আরও বেশি সংযোগ সুবিধা ও সেবা প্রাপ্তির সুযোগ পাবে। নতুন সিটি করপোরেশন প্রশাসনের আওতায় অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, যা রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের মান ও মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি করবে।
অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি
সাভার-আশুলিয়া এলাকা ইতোমধ্যেই ঢাকার বাণিজ্যিক ও শিল্পঘন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। নতুন সিটি করপোরেশন গঠনের ফলে এখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ, ফ্লাইওভার নির্মাণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আসবে। এতে কৃষিবিদ সিটি থেকে রাজধানী বা অন্যান্য প্রধান এলাকায় যাতায়াত আরও সহজ ও সময়সাশ্রয়ী হবে। উন্নত সড়ক সংযোগের কারণে বিনিয়োগকারীরা ও সাধারণ ক্রেতারা এই অঞ্চলে বসবাস বা ব্যবসা করার ব্যাপারে আরও আগ্রহী হবেন।
পানি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা
সাভারবাসীর প্রধান দুশ্চিন্তার একটি হলো ওয়াসার পানি। তবে নতুন প্রশাসনিক কাঠামোতে স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং পরিষ্কার ও নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হবে। কৃষিবিদ সিটির মতো আবাসিক প্রকল্পে ইতিমধ্যেই নিজস্ব পানি শোধন ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক রয়েছে। সিটি করপোরেশন গঠনের পর এই সুবিধাগুলো আরও উন্নত করা যাবে, যা টেকসই নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজ করবে।
পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত নগরায়ণ
বর্তমানে সাভার ও আশুলিয়ায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে বায়ু ও পানিদূষণ একটি বড় সমস্যা। সিটি করপোরেশন হিসেবে এখানকার উন্নয়ন হবে পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব, যা ভবিষ্যতের টেকসই শহর গঠনে সহায়তা করবে। কৃষিবিদ সিটি, যেটি সবুজ পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠছে, নতুন প্রশাসনিক সহায়তায় পরিবেশ সংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উদ্যান পরিকল্পনায় আরও অগ্রগতি অর্জন করবে।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা
সিটি করপোরেশন হওয়ার ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাত থেকেই বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পরিবহন ও প্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কৃষিবিদ সিটির নিকটে নতুন অবকাঠামো ও শিল্প স্থাপনা গড়ে উঠলে এলাকার জমির দাম, বাণিজ্যিক স্পেস ও রিয়েল এস্টেট বাজারের চাহিদা বাড়বে। ফলে যারা ইতিমধ্যে এখানে বিনিয়োগ করেছেন, তারা দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পাবেন।
কৃষিবিদ সিটির জন্য কী পরিবর্তন আসতে পারে
‘সাভার সিটি করপোরেশন’ ঘোষণার মাধ্যমে কৃষিবিদ সিটি এখন একটি প্রিমিয়াম রেসিডেনশিয়াল জোনে পরিণত হওয়ার পথে। পরিকল্পিত আবাসন, উন্নত নাগরিক সেবা, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত রাস্তা ও ড্রেনেজ সংযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা – সবকিছুই আরও শক্তিশালী হবে। ফলে এখানকার জমি ও ফ্ল্যাট মালিকদের জন্য এটি এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন। পাশাপাশি, নতুন বিনিয়োগকারীরাও বুঝবেন যে কৃষিবিদ সিটি এখন শুধুমাত্র একটি হাউজিং প্রকল্প নয়—বরং একটি সিটি করপোরেশনের অংশ হিসেবে পূর্ণাঙ্গ আধুনিক শহরের রূপ নিচ্ছে।
ভবিষ্যতের পথচলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাভারকে সিটি করপোরেশন করা মানে শুধুমাত্র নামের পরিবর্তন নয়; এটি হবে একটি বৃহৎ নগর পরিকল্পনার সূচনা। নতুন করপোরেশন সঠিকভাবে পরিচালিত হলে সাভার ও আশুলিয়ার মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হবে, নাগরিক সেবা পৌঁছাবে ঘরে ঘরে, এবং কৃষিবিদ সিটির মতো উন্নত আবাসন প্রকল্পগুলো দেশের সেরা আবাসিক এলাকায় পরিণত হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন সামগ্রিক পরিকল্পনা, জনসচেতনতা এবং সুশাসন। উন্নয়ন যেন শুধু কাগজে না থাকে—বাস্তবে মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘সাভার সিটি করপোরেশন’ গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নগরায়ণের মানচিত্রে যুক্ত হতে যাচ্ছে একটি নতুন অধ্যায়। এটি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি সাভার, আশুলিয়া এবং কৃষিবিদ সিটির ভবিষ্যৎকে আরও আধুনিক, পরিকল্পিত ও টেকসই করে তোলার এক বাস্তব পদক্ষেপ। একটি সুশৃঙ্খল ও সবুজ নগরী গঠনের এই পথে কৃষিবিদ সিটি হতে পারে সাভারের উন্নত নগরায়ণের অনন্য উদাহরণ।